রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি (এম শামসুল আলম) : বাংলাদেশ সরকারের যে সকল মন্ত্রণালয় দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে; তার মধ্যে অন্যতম মন্ত্রণালয় হলো “সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়”
এখানে সমাজে সবচাইতে পিছেয়ে পড়া- হতদরিদ্র, অনাগ্রসর, অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করার কথা বলা থাকলেও, সেই ডিপার্মেন্টের কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদাসীনতা, দুর্নীতি ও অনিহার কারণে সমাজে পিছেয়ে পড়া অনাগ্রসর অস্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গ আজ চরম হতাশা ও বিড়ম্বনার শিকার!
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে চলে এই দারিদ্র বিমোচনের কার্যক্রম।
কিন্তু মন্ত্রনালয়টি সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে গেলেও উপজেলা পর্যায়ের কিছু অসাধু সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসার থেকে শুরু করে ইউনিয়ন কর্মী ও পিওনরাও ধাপে ধাপে টাকা চাই।
একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্ত করতে ফরম পূরণ করতে টাকা, ইউনিয়ন মাঠ কর্মী সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছে পাঠানোর জন্য সীল মোহর ও স্বাক্ষর দিতেও টাকা, ডাক্তারের কাছ হতে পাঠানো সনাক্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে স্মার্ট কার্ড (সুবর্ণ পত্রে) নিতে গিয়ে দিতে হয় টাকা, এবার স্মার্ট কার্ড (সুবর্ণ পত্রে) নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিনীধীদের কাছে ভাতার আবেদন করতেও দিতে হয় টাকা। আবেদনের পরে যাচাই-বাছাই করাতেও সমাজসেবার ইউনিয়ন মাঠ কর্মীকেও আবারো দিতে হয় টাকা!
এতো গুলি ধাপ পেরিয়ে ভাতাভোগী যখন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যম বিকাশ কিংবা নগদ একাউন্টে ভাতা পাওয়ার কথা, ঠিক তখন একবার বা দুইবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবার ইউনিয়ন মাঠ কর্মীদের একান্ডে ভাতার টাকা চলে যায়
এজেন্ট পরিচয়ে প্রতারক চক্রের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা দেশে নতুন কিছু নয়।
তবে এ ধরনের প্রতারণা ক্রঃমশ বেড়েই চলেছে। এমনকি প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী অসহায় ব্যক্তি’রা ।
উল্লেখ্য; বাংলাদেশ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সেবা কার্যক্রমের আওতায় টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিড়ম্বনা ও হয়রানি এড়াতে সকল ভাতাভোগীদের কাছে তাদের প্রাপ্য টাকা পৌঁছে দেওয়া মহৎ উদ্যোগ সরকারের পক্ষ হতে নেয়া হয়।
কিন্তু আধুনিক এ ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে গরীব অসহায় ব্যক্তিদের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার সুযোগে, প্রতারকচক্র ধোঁকায় ফেলে কখনও নগদের এজেন্ট, আবার কখনও কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে গোপন পিন নম্বর। এর পর তা পরিবর্তন করে সহজেই বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
দেশের প্রায় জেলায় বেশ কয়েকটি উপজেলা থেকে এ ধরনের প্রতারণার খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে; টাকা পাঠানোর পরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিদের ফোনে মেসেজ পাঠায়না। এরপর ফোন করে প্রত্যেক ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বরে নগদ একাউন্ট চালু করতে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সেট করতে বলা হয়।
একাউন্ট চালু হলে ব্যক্তিরা টাকা তুলতে পারেন। কিন্তু টাকা মোবাইলে পৌঁছানোর পর থেকেই প্রতারকচক্র জেলা ও উপজেলায় প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকা ও তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নগদের এজেন্ট, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানায়। এ সময় বেশী টাকা পাঠানো হবে বলে নগদের ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড চাইলে অনেক ব্যাক্তি তা প্রতারকদের দিয়ে দেন। এরপর এসব ব্যক্তিদের মোবাইল একাউন্ট থেকে টাকা কেটে যায়। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে, সরকার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার জন্য সহজ ব্যবস্থা করেছিল; তা বাস্তবায়ন হবে না। সংগত কারণেই অচেনা কাউকে পিনকোড বা পাসওয়ার্ড না দিতে ব্যক্তিদের মধ্যে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচরনা চালানো হলেও অনেক অজ্ঞ ব্যক্তি না বুঝেই তাদের কবলে পড়ে যায়।
এসকল প্রতারকদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তদন্ত সাপেক্ষে যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এভাবে অপরাধীদের চিহ্নিত করা গেলে ও দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে; অনেকটা সহায়ক হবে। মোবাইলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নিয়ে প্রতারণাসহ সব ধরনের অপকর্ম বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এমনটাই ভাতাভোগীদের প্রত্যাশা।
প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান কর্মসূচী বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের জন্য বর্তমান সরকার অতিসংবেদনশীল। অথচ জানা গেছে; বাংলাদেশ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সেবা কার্যক্রমের আওতায় ভাতাভোগীদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের বিড়ম্বনা ও হয়রানী এড়াতে সকল ভাতাভোগীদের কাছে তাদের প্রাপ্য টাকা পৌঁছে দেওয়ার সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ ভাতাভোগীদেরকে আরও বিড়ম্বিত হতে হচ্ছে। নগদে টাকা পাঠানোর পরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ কর্তৃপক্ষ ভাতাভোগী ব্যক্তিদের ফোনে কোনরকম কোন ম্যাসেজ তারা পাঠায়না, যার ফলে স্বল্পশিক্ষিত ও অশিক্ষিত ভাতাভোগীরা বুঝতে পারেননা যে- তাদের ভাতা এসেছে কিনা।
এরপর প্রত্যেক ভাতাভোগী ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বরে নগদ একাউন্ট চালু করতে সমাজ সেবা ও নগদ কর্তৃপক্ষ ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) নিজেদের মত করে সেট করাতে অশিক্ষিত ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ তাদের ভাতার টাকা উত্তোলনে পার্সওয়ার্ড ভুলে যাওয়ায় হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন।
নগদ কর্তৃপক্ষের ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পরিবর্তন করতেও খেতে হচ্ছে অনেক হিমশিম। তাদের কাষ্টমার কেয়ারে ১৬১৬৭ নাম্বারে কল করে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও তাদের সংযোগে সম্পৃক্ত হতে পারা যায়না।