সাতক্ষীরা বিশেষ প্রতিনিধি (মোস্তাফিজুর) : সাতক্ষীরায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে ইট বৃষ্টির মধ্যে গিয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন শ্যামনগরের ইউএনও মোছাঃ রনী খাতুন।
তখন সেখানে রীতিমত ইট বৃষ্টি চলছে। ঢাল সড়কি নিয়ে সড়কের দুই প্রান্তে হিংস্র মনোভাব নিয়ে অবস্থান করছে উভয় পক্ষ। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এমন সময় হটাৎ একটি গাড়ি থেকে নেমে জ্যাকেট কিংবা হেলমেট ছাড়াই সংঘর্ষ থামাতে দৌঁড়ে গেলেন উভয় পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে।
রীতিমত চমকে দেয়ার মতো এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন সাতক্ষীরা শ্যামনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন।
একজন নারী কর্মকর্তা হয়েও কোন ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই ‘বাটল ফিল্ডে’ তার এমন উপস্থিতি চমকে দিয়েছে সবাইকে। সাহসিকতাপূর্ণ তার এমন ভূমিকার জন্য সাধারণ মানুষসহ দু’পক্ষই রীতিমত তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে এমন দুঃসাহসিক কান্ড ঘটিয়ে রনী খাতুন এখন নেট দুনিয়ার মানুষের কাছে ভাইরাল ইউএনও’র খেতাব পেয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কমিটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছে। ইতোমধ্যে গত ১৯, ২০ ও ২১ জানুয়ারি উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদপন্থী নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ সম্পাদক সোলায়মানপন্থীদের দু’দফা সংঘর্ষ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার শ্যামনগর উপজেলা সদরে উভয় পক্ষ পৃথক কর্মসুচি আহবান করায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিকাল চারটার কিছু সময় আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, বংশীপুর থেকে নেতাকর্মীরা শ্যামনগরে প্রবেশের পথে প্রশাসনের বাধায় পিছু হটে। একপর্যায়ে তারা ফিরে যাওয়ার সময় ইসমাইলপুর এলাকায় পৌছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। এই ঘটনার সংবাদ পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান ইউএনও। এসময় তিনি তার নিজের দেহরক্ষী আনছার সদস্যসহ সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পিছু ফেলে রেখেই দৌড়ে চলে যান সংঘর্ষের মধ্যে। এরপর তিনি এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে সাথে নিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে ঘটনাস্থল থেকে হটিয়ে দেন।
এবিষয়ে সোলায়মান কবীরের পক্ষের যুবদল সভাপতি সফিকুল ইসলাম দুলু জানান, একজন নারী হয়ে তিনি অনেক সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। কিভাবে তিনি এমন দুঃসাহসিকতা দেখালেন বোঝা যাচ্ছে না।
আব্দুল ওয়াহেদ পক্ষের জেলা বিএনপির সদস্য আশেকই এলাহী মুন্না জানান, অলৌকিকভাবে ইউএনও ম্যাডাম রক্ষা পেয়েছেন। তার সাহসী ভূমিকার কারণে পরবর্তীতে সংঘর্ষ থামানো গেছে বলেও মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, তিনি জ্ঞাতসারে এমন কাজ করেছেন। আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সংঘাত থামাতে কাউকে না কাউকে পদক্ষেপ নিতে হতো। এসময় তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখার আহবান জানান।
সাতক্ষীরায় বিএনপি’র দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে ইট বৃষ্টির মধ্যে সাহসী ভূমিকায় শ্যামনগরের ইউএনও রনী খাতুন