রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি (এম শামসুল আলম) : বাংলা মাসের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কাটা শুরু হবে রাজশাহীর তানোরের বিলকুমারী বিলের (শিবনদী) আগাম জাতের বোরো ধান।
ধান শীষের রোয়ায় সোনালী আকার ধারন করতে শুরু করেছে। আবহাওয়া প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অনুকুলে। কৃষি দপ্তরের সঠিক পরামর্শে ও সুষ্ঠ তদারকিতে রোগেরও আক্রমন নেয় বললেই চলে। চমৎকার ফলনের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকরা। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে আগাম জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে আসছে। অনেক কৃষকের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বিলের জমিতে বোরো ধান। ধানপাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। বিল জুড়েই সোনালী সবুজ শীষের চমৎকার দৃশ্য। অল্পদিনের মধ্যেই কষ্টার্জিত রক্ত ঘামে পরিশ্রম করা ধান উঠানে আসবে।
এই আশায় বুক বেধেছেন বিল পাড়ের কৃষক-কৃষানীরা!
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে; তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে তানোর পৌর এলাকা হয়ে কামারগাঁ ইউপির বা উপজেলার শেষপ্রান্ত মালশিরা পর্যন্ত বিল কুমারী (শিবনদী) বিলের অংশ। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। বিলের মুল অংশ পৌর সদর গুবিরপাড়া, শীতলীপাড়া, কুঠিপাড়ার নিচ অংশকে ধরা হয়। মাত্র ৩০ বিঘা জলাশয় রয়েছে। তাছাড়া বাঁকি এরিয়া ধানী জমিতে রুপান্তর। মাঝ দিয়ে সরু খাল রয়েছে কয়েকভাগে। এখাল বিলের নিচুঁ জমিতে সেচের ভরসা। সরেজমিনে দেখা গেছে; উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, মাড়িয়া, জমসেদপুর মাদারিপুর, মির্জাপুর, ভবানীপুর, বাতাসপুর, পারিশো দূর্গাপুর, শ্রীখন্ডা, দমদমা, মজুমদারপাড়া, কামারগাঁ, মহাদেবপুর, হাতিশাইল এবং তানোর পৌর এলাকার তালন্দ, সমাসপুর, হরিদেবপুর, গোকুল, চাপড়া, ধানতৈড়, গুবিরপাড়া, সিন্দুকাই, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, তানোরপাড়া, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, চাঁদপুর, বুরুজ, হাবিবনগর, কালিগঞ্জ, মাসিন্দা, চাঁন্দুড়িয়া ইউপির, শিবনা দমদমা, চাঁন্দুড়িয়া, কলমা ইউপির কুজিশহর, চন্দনকোঠা এলাকার নিচে বিলকুমারী বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়ায়। এদিকে বিলের নিচুঁ জমি খাস, সেই খাস জমিতে ভূমুহীন কৃষকরা অল্প খরচে চাষ করে বছরের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
ভূমিহীন গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক বলেন; প্রায় এক বিঘার বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। খরচ খুব একটা হয় না। ধানের চেহারা ভালোই আছে। ঈদের দু’একদিন পর ধান কাটা হবে। বিঘায় কেজির মাপে ২০ মনে উপরে ফলন হয়। তবে বৃষ্টি হলে পাওয়া যায় না। শুধু আমি না অনেক দরিদ্র ভূমিহীনরা নিচের জমি রোপন করেন। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে আছে। অত্র এলাকার কৃষকরা বলেন; ঈদের আগে তার ধান কাটা হবে। বিলের জমিতে ফলন বাম্পার হয়। পাঁচ বিঘা জমির ধান পাক ধরেছে। ধান পাকা খরতাপও শুরু হয়েছে। এরকম আবহাওয়া থাকলে সুষ্ঠ ভাবে ধান ঘরে উঠবে ইনশাল্লাহ। আশা করি এবার ফলনও ভালো হবে এবং দামও ভালো আছে। তিনি আরও বলেন; সব জমিতে ধান পাক ধরেছে, ঈদের আগেই কাটা শুরু হবে, আর যদি বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়- তাহলে কৃষকদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না! শীতলীপাড়া ও গুবিরপাড়ার নিচে সব জমির ধান কমবেশী প্রায় একই সাথে কাটা পড়বে।
এবিষয়ে কৃষক বকুল বলেন; শীতলীপাড়ার নিচে প্রায় এক বিঘা জমির ধানে পাক ধরে এসেছে, ঈদের আগে শ্রমিক পেলে কাটা হবে, নচেৎ ঈদের পরদিন থেকেই কাটতে হবে।কামারগাঁ ইউপির কৃষকরা বলছেন; আমরা সবার আগে ধান রোপন করি। দু’চারদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। কারণ; সামান্য বৃষ্টি হলেই ইউপির নিচু জমিগুলো আগেই ডুবে যায়। এজন্য সবাই আগেই রোপন করে এবং আগেই কাটা মাড়ায় শুরু হয়।
এবিষয়ে কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি মিঞা ফরহাদ বলেন; ধান গাছে প্রচুর শীষ এসেছে, চেহেরাও ভালো আছে। দু’চার দিনের মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করবেন। বিলের জমিতে ফলন ভালো হয় এবং এবছর দামও ভালো। ফলে কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন; আবহাওয়া এরকম থাকলে বাম্পার ফলন ও লাভ করতে পারবে কৃষকরা, আর যদি ঝড় বৃষ্টি হয়- তাহলে মোড়কের শেষ থাকবে না। কারণ; সার, কীটনাশ, কামলাসহ সব কিছুরই দাম বেশী, এজন্য যেকোন বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশী হয়েছে। তানোর পৌর-মেয়র ইমরুল হক বলেন; ধান পাকার মতোই তীব্র রোদ বা খরতাপ চলছে। এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে সুষ্ঠু ভাবে কৃষকরা তাদের কষ্টেরচ সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবেন। পৌর এলাকার কৃষকদের বছরের খাবারের ভরসা বিলের জমি। এজমি থেকে য়ে পরিমান ধান পায়, সেটা থেকে তাদের বছরের খাবার হয়। বিশেষ করে কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া, হিন্দুপাড়া ও গুবিরপাড়া, ধানতৈড়, গোকুল, তালন্দ, গোল্লাপাড়া, জিওল, বুরুজ গ্রামের অনেক ভূমিহীনরা বিলের নিচুঁ জমিতে ধান রোপন করে থাকেন। সেই রোপনকৃত জমি থেকে যে পরিমান ধান পায়, সেটা বছরের খাবার ও খড় দিয়ে জ্বালানি এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবহাওয়ার ভালো থাকবে বলে তো সবাই মনে করছেন। তবে বৈশাখের ঝড় বৃষ্টি নিয়ে কৃষকরা একটু শংকায় আছে।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন; তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে- কামারগাঁ ইউপির মালশিরা গ্রাম হয়ে চৌবাড়িয়া ব্রীজ পর্য়ন্ত ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। নিয়মিত মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে। একাধিক মাঠ দিবস পালন করার কারনে ধানে রোগবালা হ্রাস পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে আছে, তাই কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে লে আশা করছি। ফলন ভালো হবে এবং কৃষকরা দামও ভালো পাবেন। এবছর উপজেলায় ১৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।।