যশোর জেলা প্রতিনিধি (ইমাদুল ইসলাম) : গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে অবস্থিত ১৪ তলা বিশিষ্ট পাঁচ তারকা জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেলটিতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় লুটপাট করতে গিয়ে পুড়ে মারা যাওয়া ১৯ জনের নাম রয়েছে জুলাই শহীদদের ৮৩৪ জনের তালিকায়।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর বেলা ৩.৩০ ঘটিকার দিকে যশোর শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ এর নেতৃত্বে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে হামলা ও লুটপাট চালায়। এছাড়াও দ্বিতীয় দফায় বিকেল চারটার দিকে লোকজন সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
লুটপাট করতে করতে প্রথম গ্রুপটি উঠে যায় উপরের ১২, ১৩ ও ১৪ তলায়, যেখানে ছিল মদের বার। প্রথম গ্রুপটি যখন মদ্যপান ও লুটপাটে ব্যস্ত ছিল দ্বিতীয় আরেকটি গ্রুপ এসে নীচ তলায় গান পাউডার ছিটিয়ে দিলে মুহুর্ত্বে আগুণ ধরে যায় পুরো ভবনে। এ ঘটনায় মারা যায় ২৪ জন, এর মধ্যে আছেন এক ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক, যিনি হোটেলটিতে অবকাশ যাপনের জন্যে এসেছিলেন।
এরপর বিকাল ৫.০০ ঘটিকার দিকে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক দাবী করে বলেছিলেন, ‘আমাদের ছাত্রসমাজের কেউ এমন নাশকতার সঙ্গে জড়িত নয় এবং এর আগেও তারা কোনো নাশকতা করেনি’।
গত ১৬ জানুয়ারী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত প্রথম গেজেটে সারাদেশের ৮৩৪ জন শহীদের নাম স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে জাবির হোটেল লুটপাট করতে গিয়ে নিহত ১৯ জনের নাম।
৮৩৪ শহীদের তালিকায় স্থান পাওয়া জাবির হোটেল লুটপাট করতে গিয়ে নিহত ১৯ জন হলেন- খড়কি এলাকার রাসেলের পুত্র রুহান (১৬), উপশহর বি-ব্লক এলাকায় সৈয়দ শাহিন ফরহাদের পুত্র মিথুন মোর্শেদ পিয়াল (১৮), যশোর জিলা স্কুলের ১০ শ্রেণির ছাত্র, রেলগেট ডালমিল এলাকার আবু সাঈদের পুত্র মাহিন (১৬), ঘুরুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের পুত্র সোহানুর রহমান (৩০), শহরের বারান্দি মোল্যা পাড়ার আব্দুল খালেকের পুত্র হাফিজ উদ্দিন (৩৫), সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের পুত্র রোকনুজ্জামান রাকিব (২০), ওলিয়ার রহমানের ছেলে তারেক রহমান, রুস্তম আলীর ছেলে মেহেদী হাসান, আলাল উদ্দিনের ছেলে সাকিব, মতিউর রহমান ডাবলু’র ছেলে সামিউর রহমান সাদ, আব্দুল জব্বার মোল্লার ছেলে তৌহিদুর রহমান রানা, আশিকুর রহমানের ছেলে আবরার মাশরুন নীল, নওশের আলীর ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, মফিজুর রহমানের ছেলে ফজল মাহাদী চয়ন, এসএম কবির হোসেনের ছেলে ফয়সাল হোসেন, হারুণ অর রশীদের ছেলে মেহেদী হাসান আলিফ, শাহিদুল হাসানের ছেলে সাকিবুল হাসান মাহি, মানিক হোসেনের ছেলে ইউসুফ আলী এবং শহিদুল হকের ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে শহীদ।
এ ঘটনায় ২৪ জনকে হত্যার অভিযোগে ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। হোটেল মালিক শাহীন চাকলাদারের চাচাতো ভাই যশোর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। যদিও মামলার ২০০ জন আসামীই অজ্ঞাত।
অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট বেলা তিনটার দিকে ২০০ জন দুর্বৃত্ত গানপাউডার ও পেট্রোল নিয়ে হোটেলের মধ্যে ঢোকে। প্রথমে লুটপাট শুরু করে। দুর্বৃত্তরা হোটেলের ক্যাশ ভোল্ট ভেঙে ৯০ লাখ টাকা চুরি করে। এছাড়াও ১০০টি ফ্রিজ, ১০০টি স্মার্ট টেলিভিশন, ৪৫০ কিলোভেল্টের দুটি জেনারেটর, হোটেলের স্টোরে রাখা বিভিন্ন ধরনের মালামাল, আসবাবপত্র সহ মূল্যবান সম্পদ লুট করে। এরপর গানপাউডার ও পেট্রোল দিয়ে হোটেলের ১ তলা থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এই ঘটনায় হোটেলে থাকা ইন্দোনেশিয়ার এক নাগরিকসহ ২৪ জন বাংলাদেশি পুড়ে মারা যান। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় সে সময় অভিযোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই মামলা দায়ের করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছ।