অনলাইন ডেস্ক : হারুন অর রশীদ বলেন, “মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি নির্যাতন করে ব্লেড-ছুরি দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন, তাদের ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। মিল্টন স্বীকার করেছেন যে এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি।”
মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের চেয়ারম্যান আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার। তার আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসা গরিব-অসহায় মানুষের শরীরে পচনের কারণে যখনই সার্জারির দরকার হতো নিজ হাতে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতেন তিনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ রোববার রাজধানীর মিণ্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এসব তথ্য পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, “মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে নির্যাতন করে ব্লেড-ছুরি দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন, তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। “মিল্টন স্বীকার করেছেন যে, এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরিও জব্দ করা হয়েছে।”
হারুন বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। সেই অপরাধ একটি-দুটি নয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন সেসব।
‘তার অ্যাকাউন্টে এখনও এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতোগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়ে নিজেই অপারেশন করতেন।
‘এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ- এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজ করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘যে ছেলেটা (মিল্টন) সেই উজিরপুর থেকে বাবাকে পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। অসহায়-গরিব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে সে ওই আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে।’
তিনি বলেন, ‘তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে নিজেই প্রচার করত। মানুষগুলো মারা গেছেন। অথচ জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যাভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না!’
‘৯০০ মরদেহ দাফন করা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিল্টন জানান, তিনি ১০০ জন মানুষকে দাফন করেছেন। তবে এর তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি।’
‘যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিলো তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেয়া হতো না স্বজনদের।’
ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিলো? বিক্রি করতো? সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘একটু ধৈর্য্য ধরেন। সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম মিল্টন সমাদ্দার বাংলাদেশে যদি আরও থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে এ ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।’
‘মিল্টনের স্ত্রীও দায় এড়াতে পারেন না’
মিল্টন নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে তার স্ত্রী মিতু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। সে বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, ‘তিনি (মিতু হালদার) নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও দায় এড়াতে পারে না।’
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সঙ্গে স্ত্রী মিতু হালদারের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কী না জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘মিল্টন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ, আর্তমানবতার তথাকথিত সেবার নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। রোগীকে দেখিয়ে টাকা আয় করেছেন, অথচ তাদের সেবাযত্ন করেননি, ডাক্তারের কাছে পাঠাননি।
‘সেখানে তো স্ত্রী মিতু হালদার যেতেন। তিনি নিজেও তো নার্স। স্বামীর অনিয়ম অপকর্ম জেনেও থানা-পুলিশ বা কাউকে অবগত করেননি। প্রতিবাদ করেননি। তাই স্বামীর অপকর্মের দায় স্ত্রী হিসেবে তিনি এড়াতে পারেন না।
‘তবে তিনি দাবি করেছেন, ফাউন্ডেশনের নামে যেসব টাকাপয়সা এসেছে, অ্যাকাউন্ট বা কোনো কিছুতে তার নাম (মিতু হালদার) নেই।’