সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতির পদে একজন বিএনপি পন্থী ও সাধারণ সম্পাদক পদে একজন হাইব্রিড নেতাকে মনোনীত করার পায়তারা চলছে। যার কারণে আ’লীগ পন্থী সিএন্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিতে আনা হলেও শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তা আমলে আনতে চাইছে না। প্রতিবারই সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এবারও বাত্যায় ঘটছে না। টাকার প্রতিযোগিতায় আ’লীগ সমর্থিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা পিছিয়ে পড়ছে। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের একাধিক সূত্র থেকে এ খবরের সত্যতা পাওয়া গেছে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে আ’লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য শনিবার সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে দলীয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উক্ত বৈঠকে সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সদর উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রশিদসহ ১২ জন সিএন্ডএফ এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। ঐ বৈঠকে বন্ধ হয়ে যাওয়া নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুকে দেখে আ’লীগ সমর্থিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা কানাঘুষা শুরু করে। তবে, আ’লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা যে প্যানেল মনোনীত করবে তা সকলেই মেনে নেবে। কিন্তু ঐ বৈঠকে দুই জন সিএন্ডএফ এজেন্ট বলেন, বিগত দিনে যাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার দাবী জানানো হয়।
অপরদিকে, ঐদিন রাতে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের বাসভবনে আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন সিএন্ডএফ এজেন্টকে নিয়ে পৃথক বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি শেখ সাঈদ উদ্দিন দৃঢ়তার সাথে বলেন, কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু বিএনপিপন্থী। তাকে কোনোক্রমেই আ’লীগের প্যানেলে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। তার বক্তব্যের সাথে উপস্থিত আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা একমত পোষণ করেন। অপরদিকে, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকের পদ পেতে দোঁড়ঝাঁপ ও বিভিন্ন নেতাদের মাধ্যমে সেলফোনে তদবির অব্যহত রেখেছে বিএনপিপন্থী কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও হাইব্রিড আ’লীগ নেতা এস. এম. মাকসুদ খান। বন্ধ হয়ে যাওয়া নির্বাচনে এই দুই জন দুই প্যানেলের প্রার্থী হলেও আদর্শগত কারণে তাদের মধ্যে মিল রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা গোপনে বৈঠক করেন। আসন্ন নির্বাচনে আ’লীগ মনোনীত প্যানেল থেকে তারা সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অর্থ-সম্পাদকের পদ দেওয়ার কথা বলে সিএন্ডএফ এজেন্ট ও সাবেক এক যুবদল নেতার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আ’লীগের ঘাড়ে ভর করে বিএনপিপন্থীরা ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নিয়ন্ত্রন নিতে চক্রটি মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে ৯ টি পদের বিপরীতে মাত্র ৯ টি মনোনয়ন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
২০২১ সালের ৪ অক্টোবর ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নির্বাচনী সাধারণ সভায় উপস্থিত হন সাতক্ষীরা সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ. কে. ফজলুল হক। সাধারণ সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে তারা বিএনপিপন্থী সিএন্ডএফ এজেন্ট কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুকে সভাপতি ও আ’লীগপন্থী সিএন্ডএফ এজেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়াই নির্বাচনী সাধারণ সভায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করায় সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য এজাজ আহমেদ স্বপন হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। মহামান্য হাইকোর্ট এর নির্দেশনায় অত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান খুলনার বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম এর ৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল করে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য এজাজ আহমেদ স্বপনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি ঘোষণা করে। উক্ত কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। যথানিয়মে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দীতায় মুখোমুখি হয়। আ’লীগ সমর্থিত প্যানেল এর সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এজাজ আহমেদ স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন হাইব্রিড আ’লীগার এস এম মাকসুদ খান।
অপরদিকে বিএনপি-জামায়ত সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন অহিদুল ইসলাম। কিন্তু ভোটার সংক্রান্ত জটিলতার কারনে শ্রম আদালতের নির্দেশে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন মাস পর খুলনার শ্রম আদালত সব পক্ষের আবেদন গ্রহণ করে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা দেয়। এরই মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে একাধিক বিষয় নিয়ে মত পার্থক্য সৃষ্টি হলে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক পদে নিযুক্ত করা হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল নির্বাচনী সাধারন সভায় নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী ২৬ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। নিবাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ মে মনোনয়ন সংগ্রহ ও ১০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন ধার্য করা হয়।