মানবচিত্র ডেস্ক : বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত আড়াই হাজার নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে গরিব নারীদের টার্গেট করে ভালো বেতন ও বিনামূল্যে হজ্ব করার প্রলোভন দেখিয়ে এ সকল নারীদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হতো না। বরং বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করা হত তাদের।
সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর পল্টন থানার সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আবুল হোসেন ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বিদেশে পাঠানোর জন্য আনা তিন নারীসহ ৩১ টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন তথ্য ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, দেশে মানব পাচারকারী চক্রের টার্গেটে পরিনত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র সহজ সরল মানুষ। তাদেরকে লোভনীয় বেতনে চাকরিসহ সৌদি আরবে বিনামূল্যে হজ্ব পালন করার প্রলোভন দেখানো হতো। কিন্তু বিদেশে নিয়ে বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতন করা হত।
র্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, দীর্ঘদিন ধরে বৈধ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড রিক্রটিং এজেন্সির আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতন অপকর্ম করে আসছে। সে এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য দালাল রয়েছে। দালালদের মাধ্যমে সে মূলত সমাজের বেকার অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বিবাহত, তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ও নারীদের মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনে চাকরি, বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা খাওয়া সুবিধা, স্মার্টফোন নেওয়া এবং সৌদিতে হজ্ব করানোর মত ধর্মভিত্তি লোভনীয় চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠাত। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথমে তারা ভুক্তভোগীদের জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে এবং পরবর্তীতে ২ থেকে ৩ দিন পর বিভিন্ন জনের বাসায় পাঠানো হতো।
বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের দ্বারা সব ধরনের কাজ করানো হত। কিন্তু ঠিক মতো খাবার খেতে দেওয়া হতো না। অকারণে বেধরক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। এমন কি বিদ্যুতের সর্ট দেওয়া হত।
চক্রের অন্যতম দালাল হিসেবে কাজ করা আলেয়া আগে পল্টন এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ করেছে। ২০২১ সাল থেকে আবুল হোসেনের কনকর্ড রিক্রুটিং এজেন্সিতে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ শুরু করে। বিদেশে পাঠানোর আগে এই সকল শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন সাদা কাগজে সই নেওয়া সহ বিভিন্ন কাজ করত।