কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি (আবদুর রহিম) : মানবপাচার মামলায় অভিযুক্ত বড় ভাইয়ের বদলে ১২ বছর বয়সে হাইকোর্টে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে আলোচনায় আসা রামুর সেই রফিকুল ইসলাম অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশাখালীর শাপলাপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে ভয়ানক প্রতারণার গল্প।
২০১৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই সে প্রতারণার অংশীদার। একটি মানবপাচার মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন নিতে বড় ভাই আলাউদ্দিনের বদলে হাজির করা হয় ছোট ভাই রফিকুল ইসলামকে। বয়স বিবেচনায় আট সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এই ঘটনা জানাজানি হলে কক্সবাজারে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে রামুর চাকমারকুলের বসতবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায় আলাউদ্দিন, রফিকুল, তাদের মা রাজিয়া বেগমসহ পুরো পরিবার। মা-ভাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এবার র্যাবের হাতে ধরা পড়ল সেই রফিকুলও। এখন তার বয়স ১৫।
রফিকুলকে গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার দুপরে র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর মেহেদী ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে কতিপয় মানবপাচারকারী মালয়েশিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে নুরুল ইসলামসহ আর একজনকে ট্রলারের মাধ্যমে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। কয়েকদিন পর জাহাজটি থাইল্যান্ড উপকূলে তাদের নামিয়ে দেয়। অতঃপর সেখানকার দালালেরা তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে স্থানীয় আলাউদ্দিনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। পরবর্তীতে তাদের মালয়েশিয়ার দালালদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মালয়েশিয়া পুলিশ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় । এক বছর কারাভোগের পর ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নুরুল ইসলাম দেশে ফিরে আসে। এরপর ২৯ অক্টোবর নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে আলাউদ্দিনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা করে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালতের একটি দ্বৈত বেঞ্চে আলাউদ্দিনের বদলে তার ছোট ভাই রফিকুলকে দাঁড় করানো হয়। জামিন হয় আলাউদ্দিনের নামে।
মেজর মঞ্জুর মেহেদী ইসলাম আরও জানান, ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন মিলে মামলার বাদী নুরুল ইসলাম ও চাকমারকুল ইউনিয়নের পশ্চিম শাহ আহমেদের পাড়ার বাসিন্দা রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। তাদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে রফিকের চোখ ও মুখে জখম হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চলতি বছরের ২৯ মার্চ রামুর চাকমারকুলের শাহ আহমেদের পাড়া এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় আলাউদ্দিন ও তার মা রাজিয়া বেগম।