মানবচিত্র ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা কাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানে তাদের স্বাগত জানাবেন স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে অবস্থান শেষে সেদিনই শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হচ্ছেন দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান, সিআইপি। এ ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিবসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একদল প্রতিনিধি। থাকবেন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরাও।
এ সফর প্রসঙ্গে ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, ‘ভারতে চার দিনের সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও ভীষণ গর্বের। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। আমি বিশ্বাস করি, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীতে যে শান্তি স্থাপন করতে চায়, তার শুরুটা কিন্তু আমাদের বাংলাদেশিদের হৃদয় থেকেই। আমরা যখন বর্ণ-গোত্র-জাতি নির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই, তখনই সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়।’ ড. এরতেজা হাসান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশিরা সাম্যে বিশ্বাসী। কেউ আলাদা নয়, সবাই সমান। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিগত মিলও রয়েছে। আমাদের মধ্যে আছে শক্ত বন্ধন।’
প্রসঙ্গত, ড. কাজী এরতেজা হাসান এর আগে এ বছর মার্চে ছয় দিনের সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, গত বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ১৪ দিনের ইউরোপের তিন দেশ (যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড ও ফ্রান্স); এর আগেও সুইডেন, ব্রুনাই, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সফর প্রসঙ্গে ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে পারা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আমি নিজেকে ধন্য মনে করি, বারবার তিনি আমাকে এই সুযোগটি দিয়েছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তার প্রতি। ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ন্ত বিমানে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখেছি, নামাজের সময় কিবলা, কম্পাস দিয়ে পশ্চিম দিক নির্ধারণ করে নামাজ আদায় করেন; তখন সত্যিই হৃদয়ের গহীনে আত্মিক একটা শান্তি খুঁজে পাই। কারণ ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা নেত্রীকে দেখেছি খুব কাছ থেকে।’
চার বছর আগের কথা বলতে গিয়ে ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, “২০১৭ সালের এক রমজানের সময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে সুইডেনে যাচ্ছিলাম। দীর্ঘ ২১ ঘণ্টার রোজা রেখেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় দেখেছি দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত দীর্ঘ ভ্রমণে তিনি সময়মতো নামাজ আদায় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এত কাছ থেকে ইসলামের প্রতি তার অনুরাগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তাকে নিয়ে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার ধর্মচিন্তা’ বইটি ২০১৮ সালে লিখে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসেম্বর মাসে তার হাতে হস্তান্তর করি। শুধু জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রীর ধর্ম নিয়ে ভাবনাগুলো জানানোর তাগিদ থেকেই এটা করেছি। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। কারণ মন থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করি বলেই সেই শক্তিশালী আত্মিক বিশ্বাসের জায়গা থেকেই লিখেছি।”
ড. কাজী এরতেজা হাসান আরো বলেন, ‘যতবারই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছি ততবারই মুগ্ধ হয়ে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি, একজন প্রধানমন্ত্রী সাধারণ্যে কতটা অসাধারণ হতে পারেন। তার মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সততা, সাহসিকতা এবং নেতৃত্বগুণ দেখে আমি একজন আত্মিক শিষ্য হিসাবে তার কাছ থেকে শিখছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর তাকে দেওয়া হবে গার্ড অব অনার। পরে প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ করবেন। পরে তার সম্মানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেবেন। শেখ হাসিনার সফরকালে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করসহ শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারাও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) আয়োজিত এক ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ সদস্যের উত্তরসূরিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ‘মুজিব স্কলারশিপ’ও দেবেন।
দিল্লির প্রখ্যাত নিজামুদ্দিন দরগা পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে পবিত্র এই দরগাটি গুরুত্বপূর্ণ। সফরে প্রধানমন্ত্রী দরগার এক জিম্মাদার সৈয়দ বাসিত নিজামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। বঙ্গবন্ধুও দরগাটি পরিদর্শন করতেন, যখন সৈয়দ বাসিতের বাবা কবির উদ্দিন নিজামি ও দাদা সৈয়দ মোহাম্মদ মিয়া নিজামি খাদিম ছিলেন। সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন ড. এরতেজা হাসান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জ্বালানি তেল ও তিস্তার বিষয়টি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে জ্বালানি সহযোগিতা। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। ভারত সফরে জ¦ালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, খাদ্য, বিনিয়োগসহ পারস্পরিক বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরবে ঢাকা। ভারত সফর শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।