পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি (শ্রী মিশুক চন্দ্র ভুঁইয়া) : একে একে চলে গেলো ৩ টা দিন তবুও দেখা মিললো না সূর্যের ফলে চরম দূচিন্তা ও দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে উত্তরের জনপদ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর তার মাঝে, উপকূল এলাকা পটুয়াখালী জেলা, খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো।
এই জেলা বঙ্গোপসাগরের কাছে হওয়ায় প্রতিবছরেই শীতের সময় বিশেষ করে জানুয়ারীর মাঝা মাঝি থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে খুব কষ্টে কম হয়,সাধারণ জনগণ জীবন যাপন করে। জেলার কয়েকটি অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় শীত নিবারনের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষেরা বাড়ির উঠানে খড় কুঠো জালিয়ে নিচ্ছে একটু উষ্ণতা। এবিষয়ে গলাচিপা উপজেলা, পটুয়াখালী জেলা ও কয়েকটি ইউনিয়নের ভবন বাজার এলাকায় কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান টানা ২ দিন ধরে সূর্যের কোন দেখা মিলেনি যার কারণে আমরা চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করতেছি, কাজে যেতে পারছি না, কেউ কাজে ও নিচ্ছে না।
এদিকে উক্ত এলাকার মুদিমনোহারী ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বলেন শীতের কারণে আমরা দোকানে কোন বেচা কেনা করতে পারছি, কাষ্টমার বাজারে আসতে পারছে না শীতের, এদিকে এই তীব্র শীতে আমরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেড়াতে পারছি না আর গাড়ি নিয়ে বেড়ালেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের কারন কনকনে শীত আর হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় আমরা গাড়ির স্টাডিং সঠিক ভাবে ধরতে পারি না, আর রাত ৮ বাজলে ঘন কুয়াশার কারনে রাস্তা দেখতে পারি না।
এছাড়াও এলাকার কয়েকজন বলেন এই তীব্র শীত আর হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় আমরা খুবেই নাজেহাল হয়ে পড়েছি আমরা খুব দূচিন্তায় দিন পার করছি, বিশেষ করে শিশু বাচ্চা এবং বয়স্কদের নিয়ে।
এই ঠান্ডায় তাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে সর্দি কাশি সহ নানান ধরনের রোগ এবং এখন পর্যন্ত আমাদের কে কেউ কোন প্রকার সাহায্য সহায়তা হাত বাড়িয়ে দেয়নি বিশেষ করে শীত নিবারনের জন্য শীত বস্ত্র। এই ঘন কুয়াশা এবং শৈত্য প্রবাহ আরো ৩ থেকে ৪ দিন অব্যহত থাকবে এর পরে কিছু টা ভালো হবে এবং আজকে আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বিমান বন্দর আবহাওয়া অফিস আজকের তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা কয়েক দিনের চেয়ে রেকর্ড তাপমাত্রা আজকে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করেছি এবং আরো কয়েকটি জায়গায় শীতার্ত মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হবে।
পটুয়াখালীতে বেশ কয়েকদিন ধরে কুয়াশায় জেকে বসেছে শীত। তীব্রতাও অনেক বেশি। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার কারণে গত ২/৩ দিন থেকে ঠিকমত সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুরের পর কোন কোন দিন সূর্য উঠলেও বেশিক্ষণ তীব্রতা থাকছে না। এতে করে বিভিন্ন বয়সী মানুষজন সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছেনা সাধারণ মানুষরা।
এ অবস্থায় গরম কাপড়ের দোকানে উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। তবে সুযোগ বুঝে বিক্রেতারা কাপড়ের দামও হাকাচ্ছেন বেশি বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। ১৩ জানুয়ারী শনিবার পৌর শহরের কোর্ট প্রাচীর ঘেষা হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ, শিশুরা ভীড় জমিয়েছেন। তারা প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় কিনছেন সেখানে। প্রায় প্রত্যেকদিন সকাল থেকে দেখা যায়, রাত ১২ টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। এ কয়েকদিনের প্রচন্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন রাত ৮ টার মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরের হাট বাজারগুলো। শীত নিবারনের জন্য গরম কাপর কিনতে শীতের পুরোনো কাপরের দোকানগুলোতে ভীড় করছেন অনেকেই।
তবে কোর্ট এলাকায় হর্কাস মার্কেট ও কালেক্টর পুকুরের এর মাঠে পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে ভীড় সবচেয়ে বেশি। বিক্রিও হচ্ছে ভাল। তবে সন্ধার পর কোর্ট কারেক্টর হকার্স মার্কেটে ভীড় জমতে দেখা যায় বেশি। সেখানে বিভিন্ন বয়সীদের জন্য নানা ধরনের কাপড় বিক্রি হতে দেখা যায়।
কাপড় কিনতে আসা পৌর শহরের কলাতলা এলাকার বাজারের পাসের মোঃ রিপন মিয়া ও কোর্ট এলাকার দোকানদার মোঃ জামাল, মোঃ হানিফ ভান্ডারী সহ আরও অনেকে জানান, এখানে বাচ্চার জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন তিনি। শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে ভেবে তিনি এখানে কাপড় কিনছেন। ভাল মানের কাপড় এখানে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
কারেক্টার পুকুরের মধ্যে হর্কাস মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসায়ি লিটন ইসলাম জানান, এ বছর নিত্য নতুন, ভাল মানের শীতের গরম কাপড়ের দোকান বসেছে। ক্রেতারা উন্নত মানের যাবতীয় কাপড় সংগ্রহ করতে পারেবেন এবং এখনকার মত শীত থাকলে বেচাকেনাও আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। শীতে কাজ করতে অসুবিধা হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় কাজে যোগদান করতে না পেরে অসহায় হয়ে পরেছেন তারা।
সেই সাথে শীতে জড়ো-সড়ো হয়ে গেছে গবাদী পশুও। কেউ কেউ আবার খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে করছেন শীত নিবারণের চেষ্টা।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, ১৩ জানুয়ারী শনিবার পর্যন্ত জেলায় সর্বোাচ্চ ২৬ ডিগ্রিও সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পটুয়াখালী জেলা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ সুলতান আহম্মেদ মৃধা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কিছু স্থানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। তবে শীত যত বাড়বে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তর ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষেরা।