নড়াইল জেলা প্রতিনিধি (মো: হাচিবুর রহমান) : হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবাসহ যে কোনো মাদক, মাদক সেবন মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন মাদক সেবনে শরীর দুর্বল হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। স্বাভাবিক যৌনশক্তি হারিয়ে যায়।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে ওঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজের ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। এতে করে উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় ওঠতি তরুণ ও যুবক ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরাও জড়িত। আর প্রভাবশালীদের কারণেই প্রশাসনও রয়েছে ‘নীরব’।
পুলিশ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার করলে সঙ্গে সঙ্গে তদবির শুরু করে দেয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা। মাদকদ্রব্যের মামলায় মাদক ব্যবসায়ীদের আদালতে চালান দেয়ার কিছুদিন পর জামিনে এসে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে তারা। ফলে উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিদিন বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে উপজেলার নড়াগাতির বিভিন্ন এলাকা মাদকের আখড়া বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, এই উপজেলায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। তাছাড়া মাদকের ব্যবসায় লগ্নি আছে বেশ কয়েকজনের। মূলত প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারি ম্যানের সাহায্যে মাদক বিক্রি হয় কালিয়ার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ‘ইয়াবা’ ‘গাঁজা’র দাম তুলণামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে নজর ও আকৃষ্ট সবার। উপজেলার জয়নগর,পুঠিমারি, বাঐসোনা ইউনিয়নের বাঐসোনা, ডুমরিয়া,যোগানিয়া, দক্ষিণ যোগানিয়া, পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের সরসপুর, পহরডাঙ্গা, চর-মধুপুর, চাপাইল, বল্লাহটি, পাখিমারা এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। এসব এলাকায় সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা বিক্রেতাদের দেখা যায়। এ ছাড়া উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় কালিয়ায় ফেনসিডিল, গাঁজা ও মদের ব্যবসা করতেন গুটিকয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। তাও খুব গোপনে বেচাকেনা হতো। এখন গাঁজা-মদের পাশাপাশি চলছে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা। যা প্রকাশে বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা । শুধু তাই নয়, এসব ইয়াবার ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন উপজেলার নামী-দামি পরিবারের অনেকে। যাদের প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। স্থানীয়রাও ভয়ে কেউ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ক্ষমতাধর এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্পবয়সী। এরা মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত একথা শুনলে কেউ বিশ্বাসও করবে না। কারণ এরা সবাই ভালো পরিবারের সন্তান। প্রতিদিন সকাল বেলা উন্নতমানের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাতে বাড়িতে ফেরে। পোশাকধারী এসব যুবকদের পকেটে থাকে ইয়াবা ট্যাবলেট যা প্রকাশ্যে হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে পরিচিত মাদক সেবনকারীদের কাছে। এ কারণে এসব অল্পবয়সী মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছে না পুলিশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, মাদক সেবন মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন মাদক সেবনে শরীর দুর্বল হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে যায়। বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। স্বাভাবিক যৌনশক্তি হারিয়ে যায়। মানে রাখতে হবে, মাদক মানে মরণ।
মাদকের নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। নতুন নতুন এসব মাদক ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে বাড়ছে মাদক সেনবকারীর সংখ্যা। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক তুলে দিচ্ছে ওঠতি বয়সী যুবকদের হাতে। যার মধ্যে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। মা-বাবার চোখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নেবে অভিভাবকরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরে বাবা-মা।
স্থানীয়রা বলেন, কালিয়া তথা দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে যুব সমাজ ধংস হবে।চুরি ছিনতাই, খুন অপরাধ বেড়ে যাবে।আর এ জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে। এবং অভিয়ান পরিচালনা করে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে।