জাতীয় ডেস্ক : দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতদিন সংক্রমণ রাজধানী কেন্দ্রিক থাকলেও এবার ছড়িয়েছে সারা দেশে। বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে সারা দেশে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ শাটডাউনের সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
যে কারণে ‘শাটডাউন’ শব্দটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে শাটডাউন নিয়ে আলোচনা চলছে। লকডাউন শব্দটি এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা থাকলেও শাটডাউন সম্পর্কে কারো ধারণা না থাকায় এত আলোচনা।
এখন সাধারণের প্রশ্ন হচ্ছে- এই শাটডাউন জিনিসটা আসলে কী? লকডাউন আর শাটডাউনের মধ্যে পার্থক্য কী? এটা কবে থেকে শুরু হবে? ঈদের আগে শুরু হলে কোরবানির পশু কীভাবে বেচাকেনা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
শাটডাউন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। শাটডাউন শব্দের অর্থ বন্ধ। শাটডাউন শুরু হলে দেশের সবকিছু বন্ধ থাকবে নাকি অন্য কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রিত হবে, সবার মনে এখন সেই প্রশ্ন।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ২৩ জুন কমিটির বৈঠককালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সারাদেশে ‘কারফিউ’ জারি করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন সবাই। তবে বৃহস্পতিবার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের পরামর্শ করা হয়।
কমিটির আরেক সদস্য বলেন, লকডাউন শব্দটি এখন হেলাফেলার হয়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যেও গণপরিবহন চলছে, মার্কেট শপিংমলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। এ কারণে তারা ‘কারফিউ’ শব্দটি প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারফিউ হোক আর শাটডাউন হোক, সারাদেশে আগামী ১৪ দিনের জন্য যানবাহন ও মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এমনকি চিকিৎসাসেবা বন্ধের উপক্রমও হতে পারে হাসপাতালে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনগণের জীবনের ঝুঁকি ঠেকাতে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিন শাটডাউনের সুপারিশ করছে। এ সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির শাটডাউনের সুপারিশ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘কমিটির সুপারিশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। সংক্রমণ যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে, আমরা বিভিন্নভাবে তা কমানোর চেষ্টা করছি। স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দিচ্ছি, দিয়ে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন হবে সেটাই আমরা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সংক্রমণটা ঊর্ধ্বমুখী, দৈনিক সংক্রমণ ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকার পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে যেটি উপযুক্ত হবে, সেই সিদ্ধান্তই আমরা নেব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগে আমাদের সংক্রমণ ৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখনো অনেক জায়গা আছে যেখানে সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে। আমরা চাইছি…ইতোমধ্যে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে কঠোর বিধিনিষিধে দিয়েছি। তারপরও ঢাকার মধ্যে লোকজন এসে যাচ্ছে। এই যোগাযোগগুলো…। ইতোমধ্যে বাস, ট্রেন, যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করেই কিন্তু আমরা এ সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ কমাতে পদক্ষেপ নিতে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। সেই অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত নেয়া উপযুক্ত এবং সঠিক হবে, সেটা আমরা নেব।’