জাতীয় ডেস্ক : বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সরকারপ্রধানের ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতে সবাইকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
প্রতি বছরই বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এটি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও দেশের কল্যাণে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের আয়োজনে পড়েছিল ভাটা। এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় রমনা বটমূলে বৈশাখের আগমনী অনুষ্ঠান করবে ছায়ানট। এরই মধ্যে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনটি।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাগতিক নিয়মের পথ-পরিক্রমায় বছর শেষে আমাদের মধ্যে আবার এসেছে নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। সবাইকে নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। মুসলমানদের সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজান মাস চলছে এখন। আমি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুষঙ্গ। ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজষপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমত উন্নতমানের খাবার।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের চল ছিল। আজিমপুর, ওয়ারি, ওয়াইজঘাট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হালখাতা উৎসব হতো, মেলা বসতো, মেলায় পণ্য বেচাকেনা, গান-বাজনা, যাত্রা-সার্কাস ইত্যাদির আয়োজন হতো। ষাটের দশকে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ, সঙ্গীত পরিবশেন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সঙ্কীর্ণতা, কুপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এ স্বজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
তিনি বলেন, আজ শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি তার বসবাস গড়ে তুলেছেন, সেখানেই বাঙালির হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা জানান দেন তারা বাঙালি। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবী জুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধন।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা করা যায়নি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। তাই এবার সীমিত আকারে হলেও বহিরাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। তবে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোন সময় যেকোন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্য যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
অমঙ্গল তাড়াতে লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন মোটিফ নিয়ে চারুকলার এই আয়োজন বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন করেন।
জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে দিয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি।
এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।