ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি (স্বপন মাহমুদ) : দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কুমারনদীর ভূগর্ভ থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন করে ব্যবসা করে আসছে নুরুল হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
এমন গোঁপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার(২৯ এপ্রিল) সকালে ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও শৈলকুপা প্রেসক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে উপস্থিত হয়। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর শুনে দ্রুতই ঘটনাস্থলে হাজির হয় মাটি ও বালি খেকো নামে পরিচিত ওই ব্যক্তি। পরে সাংবাদিকদের নিউজ সংগ্রহ করতে বাধা ও হুমকি প্রদান করে সে।
ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকায়। মাটি ও বালি খেকো নুরুল ওই ইউনিয়নের শিতালীডাঙ্গা গ্রামের আজিজাল মন্ডলের ছেলে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালিয়া ও শিতালিডাঙ্গা এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমারনদ থেকে শ্রমিক দিয়ে বালি উত্তোলন করছে এই নুরুল।
যেখান থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে তার আনুমানিক ২০০/২৫০ গজ অদূরে একটি ব্রিজ অবস্থিত। এছাড়া পাশেই রয়েছে বাড়িঘর ও পল্লী বিদ্যুৎতের কয়েকটি খুটি। এর কোল ঘেষেই চলছে রমরমা মাটি ও বালি উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ। যা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই ব্রিজটি বড়ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি বাড়িঘর ও পল্লী বিদ্যুৎতে খুটি নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে মুহুর্তেই। শুধুমাত্র অনিয়ন্ত্রিত বালি ও মাটি উত্তোলনের কারণে। এতোসব জেনে শুনেই দিনরাত অবৈধভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন করে রমরমা অবৈধভাবে ব্যবসা করে চলেছে নুরুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন করে চলেছে এর। প্রতিটি লাটা হাম্বা গাড়ি ভর্তি বালির দাম ১ হাজার ও মাটি ৮শত টাকা বিক্রি করছেন তিনি। যা সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নদীর পাশেই অবস্থিত কয়েকটি জনবসতি ও পল্লী বিদ্যুৎতের খুটির পাশ দিয়েই কাটা হচ্ছে এই মাটি।
তারা আরো জানান, শৈলকুপা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা কয়েকবার এখানে এসেছিল। তারা নুরুলের কাছ থেকে টাকা খেয়ে চলে যায়, প্রতিরোধের কোনই ব্যবস্থা নেই না। এছাড়া সাংবাদিকরাও এসে নুরুলের কাছ থেকে টাকা খায়। যার কারণে নুরুল স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন এভাবে মাটি ও বালি ব্যবসা করে আসছে। এসব বন্ধ করতে সরাসরি কতৃপক্ষের হন্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।
মাটি ও বালিখেকো নুরুল সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে জানায়, নদী গর্ভে যেখান থেকে তিনি মাটি ও বালি উত্তোলন করছে সেটি তার নিজস্ব রেকর্ডকৃত সম্পত্তি । তবে সে রেকর্ডের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অথচ বৈধভাবেই মাটি ও বালি উত্তোলন করছে বলে দাবি করে নুরুল।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিস ও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকেও তিনি লিখিত অনুমতি নিয়েছেন কি না মর্মে প্রশ্ন করা হলে, নুরুর এড়িয়ে যায়। প্রশ্নের এক পর্যায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে সাংবাদিকদের নিষেধ করে নিউজ করতে। তা না হলে দেখে নিবে বলে সরাসরি হুমকি দেয়।
এবিষয়ে কাঁচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড সালাউদ্দিন জোয়ার্দার মামুনের নিকট জানতে চাইলে, তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়, তবে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। যার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতিমা লিজাকে তার ব্যবহৃত সরকারি নাম্বার ০১৭৯৬১১০১৩০ নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি। যার কারণে তারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।