ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি : ঝালকাঠির রাজাপুরে সিনিয়র ও জুনিয়র পদ নিয়ে দুই সহকারি শিক্ষক রিনা বেগম ও শেফালি মমতাজের দ্বন্দ্ব সহ বিদ্যালয়ে ৪ শিক্ষকের মধ্যে তিন জন শিক্ষকই নিকট আত্মীয় হওয়ায় ক্লাস চলাকালীন সময়ে তাদের পারিবারিক আলোচনা, জমা জমি নিয়ে বিরোধ, বাকবিতান্ডা ও মারামারির প্রভাবে প্রায় শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে পড়েছে ১১২ নং চর পালট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোগান্তিতে ভুগছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ৩ ক্লাসের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে মাত্র ৬ শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে এবং ৫ম শ্রেণি ছিল শিক্ষার্থী শূণ্য। ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ২ জন ছিল অনুপস্থিত। সহকারি শিক্ষক শেফালি মমতাজ ও নুপুর আক্তারকে ক্লাসে পাওয়া গেলেও প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মিটিং এবং রিনা বেগম ছুটিতে আছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে মোট ২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে ২ জন, ১ম শ্রেণিতে ৭ জন, ২য় শ্রেণিতে ৪ জন, ৩য় শ্রেণিতে ৭ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার ও সহকারি শিক্ষক নুপুর আক্তার ও শেফালি মমতাজ সম্পর্কে নিকট আত্মীয় হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সহ স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক মাসের মধ্যে ১৩-১৫ দিনও স্কুলে সঠিকভাবে আসেন না কিন্তু নিয়মিত রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। তার অনুসারী শিক্ষকরাও সঠিকভাবে পাঠদান করান না। এ কারনে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার গুনগতমান কমে গেছে। শিক্ষকদের মধ্যে পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধে, ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিরোধের কারনে বিদ্যালয়ে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী জানায়, শেফালি আপায় ক্লাসে এসে মোবাইল নিয়ে ব্যস্থ থাকে এবং বিদ্যালয়ের পাশেই তার মাছের ঘেরে গিয়ে মাছ দেখাশুনা করে। রিনা আপা ও শেফালি আপায় বিদ্যালয়ে বসে প্রায়ই বাকবিতান্ডা ও মারামারি করে। তাদের বাকবিতান্ডা ও মারামারির কারনে ভয়ে আমাদের ক্লাস রুম ছেড়ে এদিক ওদিক ছুটে পালাতে হয়। বিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয়না বললেই চলে। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকই মহিলা। আমরা এই শিক্ষকদের পরিবর্তন চাই।
দাতা সদস্য আব্দুল হালিম বিশ্বাস ও সাবেক সদস্য নুরুজ্জামান জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষকদের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্বের কারনে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই, নেই শিক্ষার মান। আর এ জন্যই অভিভাবকরাও তাদের ছেলেমেয়েদের এ স্কুলে ভর্তি করেন না। তাই দিনে দিনে শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে যাচ্ছে এই বিদ্যালয়টি। এমন পরিস্থিতি নিরসনের জন্য শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মতিন জমাদ্দার জানান, শিক্ষকদের আচরন ও আন্তরিকতার অভাবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সন্তোষজনক না। শিক্ষার্থী নেই, সঠিক ভাবে পাঠদানও হয় না।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কবির হোসেন জানান, সার্বিক পরিস্থিতি নিরসনে সভা আহবান করা হয়েছে। সভায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার জানান, সহকারি শিক্ষক রিনা বেগম ও শেফালি মমতাজ বিদ্যালয়ে বসেই প্রায়ই বাকবিতান্ডা ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে তিনি আরো জানানা, তিনি সঠিকভাবেই স্কুলে যান এবং থাকেন। মিটিং ও অফিসের কাজে মাঝে মধ্যে রাজাপুর থাকতে হয়। এছাড়া প্রত্যান্ত চর এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থী কম।
উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরজুদা বেগম জানান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের আদাখোলা স্কুলে মিটিং ছিলো এবং প্রধান শিক্ষক নাসিমা বেগমও ঐ মিটিংএ উপস্থিত ছিলেন।