জয়পুরহাট প্রতিনিধি(জাহাঙ্গীর আলম খান) : জয়পুরহাটে ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৩ জন। দুমড়ে-মুচড়ে গেছে দুর্ঘটনা কবলিত ওই বাসটি।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সময় ক্রসিংটির গেট খোলা ছিল ও সংশ্লিষ্ট গেটম্যান ঘুমিয়ে ছিলেন বলে জানা গেছে।
ঘটনা ও জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস অফিস সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা (বগুড়া জ-১১-০০০৮) বাঁধন পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস হিলিতে যাওয়ার সময় পুরানাপৈল রেলগেটের গেটম্যান গেট না ফেলার কারণে রেলক্রসিং করতেই পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে প্রায় ১ হাজার মিটার দূরে ছিটকে নিয়ে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনটি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় বাসে থাকা ১০ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত ও ৫ জন আহত হন। পরে ঘটনার খবর পেয়ে জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের সদস্যরা হতাহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠালে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে স্থানান্তরের সময় পথিমধ্যে আরো দু’জনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন- বাস চালক সদর উপজেলার হারাইল গ্রামের মামুনুর রশিদ, হিচমী গ্রামের মানিকের ছেলে রমজান, পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের সরোয়ার হোসেন, আরিফুর রহমান রাব্বি, আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু মিয়া ও নওগাঁর রানী নগর উপজেলার বিজয়কান্দি গ্রামের বাবু।
আহতরা হলেন, পাঁচবিবি উপজেলার ফারুখ হোসেন, একই উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জিয়া, টাঙ্গাইলের মাটিকাটা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আঃ রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অভিযান চালিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
জয়পুরহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ জানান, ১০ জনের লাশ মর্গে আছে, আহত ৫ জনকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করার পথে ২ জনের মৃত্যু হয়।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায় জানান, ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নিহতদের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য জয়পুরহাট পৌর মেয়র সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
পাবর্তীপুর রেললাইনের পুলিশ সুপার সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান মুঠোফোনে জানান, গেটম্যান না থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তবে তদন্ত করার পর আসল ঘটনা জানা যাবে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অত্র এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আলী জানান, ভোরবেলা ইট ভাটায় কাজ করতে যাওয়ার সময় দেখে উক্ত রেলক্রর্সিয়ের গেট না ফেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই রেলগেটের পাশে বসবাসকারী বাসিন্দা আম্বিয়া জানান, ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বিকট শব্দ পেয়ে বাইরে এসে দেখতে পায়, বেশ কয়েকটি লাশ ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে এবং রেলক্রর্সিয়ের গেট না ফেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনার কবলে পরা উক্ত বাসের হেলপার রাসেল জানান, প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না এবং রেলগেটের গেটম্যান গেট না ফেলার কারণে রেলক্রসিং করতেই ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে সে সিটকে পরে গিয়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও বাসের চালকসহ ১০ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।