অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বখ্যাত যে কোনো ব্র্যান্ডের যে কোনো পণ্যের অবিকল নকল পণ্য বের করায় চীনের কোনো জুড়ি নেই। চীনের এমন কার্যকলাপ একদিকে বিশ্ববাজারে যেমন ঘৃণিত তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে বেশ প্রশংসিত। একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা নামী-দামী ব্র্যান্ডের নকল মানহীন পণ্য চায়না থেকে বানিয়ে এনে আসল বলে বিক্রি করত। এতে গ্রাহক ভোগান্তি হতো চরম। এই ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হতো মোবাইল ও টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইসের ক্ষেত্রে। খোদ আমাদের বাংলাদেশে নকল আইফোনে বাজার সয়লাব ছিল। যে আইফোনগুলোর অপারেটিং সিস্টেম ছিল অ্যান্ড্রোয়েড।
মাণ নিয়ন্ত্রণের কারণেই হোক আর নিজেদের সুনাম ধরে রাখতেই হোক চীনের এমন কার্যকলাপ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। হাতে গোনা কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানি ছাড়া কেউই এখন আর নকল আইফোন বা অন্য কোনো ফোন তৈরি করে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরাও এখন আর গ্রাহক ঠকানো ব্যবসার তেমন একটা সুযোগ পায় না। তবে মানহীন নকল পণ্য তৈরি না করলেও দেখতে অবিকল পণ্য বানানো বন্ধ করেনি চীন। চীনের বাজারে ততোধিক ব্র্যান্ডের হুবহু দেখতে একই ডিজানের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। মূল ব্র্যান্ডের বাইরে বাকি ব্র্যান্ড গুলো খুব একটা পরিচিত না হওয়ায় এগুলো বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের ক্লোন ফোন হিসেবে পরিচিতি পায়। এর মাঝে কিছু ফোন চীনের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে উন্মুক্ত করা হলেও বিশ্ব বাজারে সেগুলো বাজারজাত করা হয় না।
এমনি একটি ক্লোন স্মার্টফোন লে-টিভি কোম্পানির লেইকো ব্র্যান্ডের এস ওয়ান প্রো। এই স্মার্টফোনটি দেখতে অবিকল আইফোন ফোরটিন প্রো এর মত। শুধু তাই নয়, ব্যবহারকারীরা এতে আইফোনের বেশ কিছু ফিচারও পাবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যেটা না বললেই নয় সেটি হচ্ছে ডায়নামিক আইল্যান্ড। আইফোন ফোরটিন এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে এই ডায়নামিক আইল্যান্ড। লে-ইকো’র এস ওয়ান প্রো স্মার্টফোনটিতে অবিকল একই ডায়নামিক আইল্যান্ড থাকছে।
স্মার্টফোনটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ঝানরুইয়ের (Zhanrui) বারো মিলিমিটার প্ল্যাটফরমের ‘টি৭৫১০’ চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটি ১.৮ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পিড আপ করতে সক্ষম। সহায়ক হিসাবে থাকছে ৮ গিগাবাইট র্যাম। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ইমাজিনেশন ৯৪৪৬। আরও থাকছে ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজ সুবিধা। তবে ফোনটির অপারেটিং সিস্টেম ও ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে জানা যায়নি।
ফোনটিতে ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছে ৬.৫ ইঞ্চির এলসিডি মনিটর যা ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। ডিসপ্লের রেজুলেশন ৭২০বাই১৬০০ (এইচডি)। ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস তবে তার গ্রেড সম্পর্কে জানায়নি লে-টিভি।
ফোনটির পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে ৩টি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে অবিকল আইফনের মতো। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ওয়াইড। তবে সেকেন্ডারি ক্যামেরা ও তৃতীয় ক্যামেরা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। আর সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকছে ৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর।
ফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি যা ১০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং। ক্যাবল-টাইপ সি। ফোনটি পাওয়া যাবে আকাশী ও কালো দুটো রঙে। ফোনটির ওজন ২১০ গ্রাম। আশ্চর্যজনক হলে সত্য যে ফোনটির নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তিতে জিএমএস এর ব্যবহার হয়নি। এতে ব্যবহার করা হয়েছে হুয়াওয়ের এইচএমএস টেকনলজি।
আগামী ২২ জানুয়ারি চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ফোনটির ঘোষণা দিয়েছে লে-টিভি। তারা জানিয়েছে সেদিন থেকেই চীনের বাজারে ফোনটি পাওয়া যাবে। তবে এই ফোনটি বিশ্ব বাজারে বাজরজাত করা হবে না। বর্তমানে ফোনটির প্রি বুক অর্ডার চলছে। ফোনটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার দাম দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।
কোম্পানিটির দাবি অনুসারে বলা যায় আইফোন না হলেও ডিজাইন ও ফিচারের দিক দিয়ে ব্যবহারকারী এই ফোন দিয়ে আইফোনের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন।