খেলাধূলা ডেস্ক : চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। ৮২ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন।
নভেম্বরের শেষ দিকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ায় সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা কাজ না করায় তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল।
হাসপাতালেই পরিবারের সঙ্গে পেলে বড়দিন কাটিয়েছেন। ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিজের শারীরিক অবস্থার আপডেট ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। চিকিৎসা কাজ করছে না জানার পরও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেছেন ভক্তদের। তবে শেষ লড়াইটা জিততে পারলেন না।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্রাজিলীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরের কিছু পর মারা যান তিনি।
১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী এদসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো বিশ্বজুড়ে পরিচিত পেলে নামেই।
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাসোয়েস শহরে জন্ম তার। ছেলেবেলা থেকেই অন্যসব ব্রাজিলিয়ানের মতো তার ঝোঁক ছিল ফুটবলের দিকে।
সেই ঝোঁককে মাঠে পায়ের জাদুতে পরিণত করতে খুব বেশি সময় নেননি পেলে। সাও পাওলোর শহর বাউরুর স্থানীয় ক্লাবে খেলতে খেলতে নজর কাড়েন কোচের। কোচ তাকে নিয়ে যান বিখ্যাত সান্তোস ক্লাবে।
সেখান থেকেই শুরু। ১৬ বছর বয়সে সান্তোসের হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়।
এরপরের গল্পটা শুধুই পেলের জয়রথের। ৩টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। করেছেন হাজারের ওপরে গোল। বর্তমান ব্রাজিলের সমার্থক ‘জোগা বোনিতো’ বা সুন্দর খেলার প্রবর্তক ছিলেন তিনি।
১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ের পর সিদ্ধান্ত নেন ফুটবল ছাড়ার। পরের বছর রিও দে জেনেইরোতে ইউগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে খেলেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
ক্লাব ক্যারিয়ারে সান্তসের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন ৭৪ সাল পর্যন্ত। এরপর আমেরিকার লিগে নিউইয়র্ক কসমস দলের হয়ে কিছুদিন খেলেন। ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর কসমসের হয়ে সান্তোসের বিপক্ষে খেলেন শেষ ম্যাচ।
১২৭৯ গোল এসেছে তার পা থেকে। যা এখন পর্যন্ত পেশাদার ফুটবলে সর্বোচ্চ। সর্বকণিষ্ঠ হিসেবে ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল ও বিশ্বকাপ জয় এখনও রেকর্ডের পাতায়।
অবসরের পর ব্রাজিল দল তো বটেই বিশ্বসেরা সব দল ও খেলোয়াড়ের পাশে গুরুজনের মতো ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। বহুবার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পরের প্রজন্মের সেরা মিশেল প্লাতিনি, মার্কো ফন বাস্তেন থেকে শুরু করে শ্রেষ্ঠত্বে তার প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে।
হালের মেসি, নেইমার, রোনালডো, এমবাপেরাও বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগের আগে পেয়েছেন পেলের শুভেচ্ছা। খেলোয়াড় কিংবা দল নয় ফুটবলকেই ভালোবাসতেন পেলে।
আর তার খেলা দেখেই বিশ্বের কোটি ভক্ত প্রেমে পড়েছে ফুটবলের। তার বিদায়ে শোকস্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব। প্রিয় ফুটবল সম্রাটের জন্য সবার চোখে জল।
কয়েক বছর ধরেই ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন পেলে। গত বছর তার কোলন টিউমারও ধরা পড়ে। কেমোথেরাপি নিচ্ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত তাকে হার মানতেই হলো। বিদায় নিলেন ৩ বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার যাকে পুরো বিশ্ব ‘ও রেই’ বা সম্রাট নামেই চেনে।