চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধি (কবির হোসেন) : কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের মর্মান্তিকভাবে কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনার মূল আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী কবির র্যাবের অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সহযোগীসহ লোহাগড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতারসহ অস্ত্র, গুলি এবং মাদক উদ্ধার।
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই ¯স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে জঙ্গি, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সর্বস্তরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র্যাব ১৫ হাজার এর অধিক অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। উদ্ধার করা হয় প্রায় ২০ হাজার অবৈধ অস্ত্র, আড়াই লক্ষের অধিক গোলাবারুদ ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র।
সারা দেশের অন্যান্য ব্যাটালিয়নের ন্যায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ অন্যান্য অপরাধের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
গত ১৫ মে ২০২২ তারিখ সকালে চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার একটি মামলার এজাহার নামীয় আসামী কবির আহমদ’কে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালায় পুলিশের একটি আভিযানিক দল। পুলিশ এর উপস্থিতি টের পেয়ে কবির অস্ত্রসহ ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হয়। প্রথমে সে তার বাসা সনাক্তকারী ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্য জনি তাকে বাধা দিলে কবির তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জনি খানকে সজোরে আঘাত করে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্য শাহাদত হোসেনকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পলায়ন করে। উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত পুলিশ সদস্যদেরকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তন্মধ্যে পুলিশ সদস্য জনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে মূমুর্ষ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য র্যাবের হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় প্রেরণ করা হয় এবং অতঃপর ঢাকার মোহাম্মদপুরে আল মানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৬ মে ২০২২ তারিখে ডাঃ সাজেদুল রেজা ফারুকী দীর্ঘ ০৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কব্জিটি জোড়া লাগাতে সক্ষম হন। বর্ণিত ঘটনায় লোহাগড়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বর্ণিত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দল লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকা অভিযান পরিচালনা করে মোঃ কবির আহমদ (৪৩), পিতা-মৃত আলী হোসেন, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম এবং তার সহযোগী মোঃ কফিল উদ্দিন (৩০), পিতা-মৃত মোস্তাক আহাম্মদ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম’দেরকে গ্রেফতার করে। অভিযান চলাকালে গ্রেফতারকৃত কবির তার নিকট থাকা অস্ত্র দিয়ে র্যাব সদস্যদেরকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে একজন র্যাব সদস্য আহত হয়। প্রতিউত্তরে র্যাব পাল্টা গুলি চালায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হতে কবিরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
উক্ত অভিযানে জব্দ করা হয় পুলিশ সদস্যদেরকে জখমে ব্যবহৃত ০১টি দা, ০১টি ওয়ান শুটার গান, ০৩ রাউন্ড গুলির খোসা, ০৩ রাউন্ড তাজা গুলি, ০২ টি হাসুয়া, ০১ টি ছুরি, ১৮০ পিস ইয়াবা, ০২ টি মোবাইল ও ০২ টি সীম কার্ড। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, ঘটনার পর কবির তার সহযোগী কফিলকে নিয়ে বান্দরবান এর দক্ষিণ হাংগর এলাকার একটি দূর্গম পাহাড়ে আত্মগোপন করে। অতঃপর সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে গ্রেফতারকৃত কবির তার সহযোগীসহ দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পুনরায় লোহাগাড়া থানাধীন বড় হাতিয়ার গহীন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গত ১৯ মে ২০২২ তারিখে র্যাব-৭ এর অভিযানে তারা গ্রেফতার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কবির স্থানীয় এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় জমি দখল, মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছে। কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বাধা দিলে তার উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করত।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায় যে, তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রটি এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর নিকট হতে ক্রয় করে। তার নামে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির মামলাসহ ০৬টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত কফিল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সময় সে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে মাদক নিয়ে এসে চট্টগ্রাম এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদক সরবরাহের সিন্ডিকেট পরিচালনা করত। সে গ্রেফতারকৃত কবির এর বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতা। সে এলাকায় বিভিন্ন মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত। তার নামে বিভিন্ন থানায় মাদক, হত্যাচেষ্টা ও মারামারি সংক্রান্ত ০৬টি মামলা রয়েছে।গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।