খুলনা ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি (মোঃ রিয়াজ উদ্দীন) : খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভার অধীনস্থ ইজারাকৃত কাপাসডাঙা খেয়াঘাটের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এই চাঁদাবাজির মূলহোতা পর্দার আড়ালে থাকে বলে এ বিষয়ে কে বা কারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তা জানা যায়নি। অত্র এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে তোলপাড় এবং সোস্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার চাঁদাবাজির সংবাদের সত্যতা পাওয়া গেলেও প্রতিকার পাচ্ছে না কেউ।
সরজমিনে অনুসন্ধান ও একাধিক ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে জানা যায়, ৩টি দ্বীপের সমন্বয় গঠিত এই উপজেলা। এর প্রত্যেকটি দ্বীপের চারপাশে নদী বেশষ্ঠিত হওয়ায় এখানে পারাপারের জন্য খেয়াঘাটের সংখ্যাই বেশি। উপজেলা আন্ত জেলা খেয়াঘাট রয়েছে ৪টি ও আন্ত উপজেলা খেয়াঘাট ৭টি এবং ১৯টি আন্ত ইউনিয়ন ঘাট। এছাড়া ৬টি লঞ্চঘাট ও ৩টি ফেরিঘাট রয়েছে। এসব অধিকাংশ ঘাটগুলি স্থানীয় ও বহিরাগত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই নানা কৌশলে নাম মাত্র পাটনিজীবিদের নামে ইজারা নিয়েছেন। ইজারাদাররা আদায়ে পটু কিছু চিহ্নিত ব্যক্তিদের বসিয়েছেন ঘাটে। তারা সরকারি মূল্য তালিকা ছাড়াই যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন দ্বিগুণ টোল। আবার যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহারও করছেন বলে স্থানীয় জনসাধারণ ও যাত্রীদের অভিযোগ। আবার রাত সাড়ে ৮টার পর বিশেষ কয়েকটি ঘাটে মাঝিদের মর্জিতে তাদের চাহিদা পুরন করে পারাপার হতে হয়। আর এসবের খেসারত দিতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মোটরসাইকেল শ্রমিক, বাইসাইকেল, ভ্যান চালক ছোট ছোট পরিবহন শ্রমিক, স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের। ওই খেয়াঘাটের এপার দাকোপ উপজেলা ওপার রামপাল উপজেলা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসবাস হাজার হাজার মানুষের। এখানে উৎপাদন হয় যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চিংড়ি তাছাড়া নানা প্রজাতির কৃষি পণ্য যা প্রতিনিয়তই বাজারজাত করতে হয়। আর এই খেয়াঘাটের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাব পড়ছে অত্র অঞ্চলের জনসাধারণের উপর।
বাজারের অধিকাংশ পণ্য বাইরে থেকে এনে দীর্ঘদিন ধরে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে দোকানদারেরা। খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া ঐ পণ্যের মূল্যের সাথে যখন যুক্ত হয় তখন তুলনামূলক ভাবে ঐ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। আর ক্রেতা যখন ঐ পণ্যটি ক্রয় করে তখন পণ্যের দাম সরাসরি জনসাধারণের উপর পড়ে। এতে প্রয়োজনের তাগিদে জনগণকে বাধ্য হয়ে চড়া মূল্যে উক্ত পণ্যটি ক্রয় করতে হয়।
সুত্রে জানা যায়, প্রতিবছর দাকোপ পৌরসভা থেকে এই খেয়াঘাট ইজারা দেয়া হয়। চলছি বছরে এই ঘাট ইজারা নেয় মুরাদ গাজী। তিনি ইজারা নেয়ার পর থেকে এখানে রহস্যজনকভাবে চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। নেই কোনো মূল্য তালিকার চাট। টোল চাট না থাকায় নিজেদের ইচ্ছামত কয়েকগুণ ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। এখানে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে চালানো হচ্ছে এই বিচার কার কাছে দিবো? কেননা এই ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে কিছুদিন এই চাঁদাবাজি বন্ধ থাকে তারপর কয়কদিন গত হলেই চাঁদাবাজির মাত্রা কয়েক গুণ হারে বেড়ে যায় বলেও বক্তব্য দেন উপস্থিত থাকা পথযাত্রী ও লেবার শ্রমিকেরা।
অন্যান্য পথচারীরা বলেন, যাত্রী মাথাপিছু যেখানে ৩/৪ টাকা নেয়ার কথা যেখানে ক্ষমতাধর ইজারাদারকে ১০ টাকা বাধ্যতামূলক দেয়া লাগে। এই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা নিয়ে যে কোন মুহুর্ত্বে সংঘর্ষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আগে মটরসাইকেল নিয়ে খেয়া নৌকা পার হলে দিতে হতো মাত্র ১০ টাকা। আর এখন ৭০-১৫০ আকা পর্যন্ত দিতে হয়। এই ঘাটে পারাপারে যদি এত বেশি টাকা গুনতে হয় তাহলে খেয়াঘাট মানুষের আরো বেশি ভোগান্তি হয়ে দাঁড়ায়।
সরকার এই এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করেছে। কিন্তু সেই যদি খেয়াঘাটের ইজারাদারদের বাড়তি টাকা দিতে হয় তাহলে তো জনগণ উল্টে আর্থিক ভোগান্তির মধ্যে পড়লো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে জোরপূর্বক চাঁদাবাজিতে চললেও ভবিষ্যতে এমন নেক্কার ঘটনার অবসান ঘটাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে ইজারাদার মুরাদ গাজীর সাথে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। কিন্তু এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাথে কথা বলেন, আমি গত প্রায় ২০ দিন এসেছি, আমি উক্ত বিষয়ে অবগত আছি।
তিনি আরো বলেন, আমি পারাপারের ভাড়ার তালিকা ঝুলানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছি। স্কুল শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় পারাপারের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তারপরও কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।