কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি (আবদুর রহিম) : কক্সবাজার সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও টিউব বাঁধ নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (বোর্ড)। গতকাল শনিবার দুপুরে ভাটার শুরু হলে সৈকত ভেসে ওঠে। এরপর শুরু হয় বাঁধের কাজ। এদিকে সমুদ্রের উত্তাল অবস্থা আগের চেয়ে কমায় সৈকতে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়নি।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির প্রভাবে চার দিন ধরে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫—৬ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। এতে বিলীন হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত চার কিলোমিটার বালুচর। ইতিমধ্যে সাগরে তলিয়ে গেছে সৈকতের পাশের কয়েক শ ঝাউগাছ, ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি তথ্যকেন্দ্র ও কয়েকটি দোকান।
সৈকতের ভাঙন রোধে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লাবণী পয়েন্টে ৪০ মিটার বালুভর্তি জিও টিউব বাঁধ দেয় পাউবো। কিন্তু শুক্রবার সকালের জোয়ারের তাণ্ডবে সেই বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। শনিবার বিকেলে ওই অংশে আবার জিও টিউব বাঁধের কাজ শুরু করে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, সমুদ্রে ভাটা চলছে। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় সৈকতের ক্ষতবিক্ষত চেহারা ফুটে উঠেছে। সৈকতে রয়েছে পর্যটকসহ কয়েক হাজার মানুষ। সমুদ্রে না নামতে বালুচরে টাঙানো হয়েছে ১০টির বেশি লাল নিশানা। প্রচারণা চালাচ্ছেন ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সি সেফ লাইফ গার্ডের কর্মীরা। অথচ অধিকাংশ পর্যটক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সমুদ্রে নেমে গোসল করছিলেন।
সৈকতে নামা পর্যটকের ৮০ শতাংশের বিচরণ সুগন্ধা পয়েন্টে। সেদিকের সৈকতে ভাঙন দেখা দেয়নি। নেই জিও টিউব বাঁধও। লাবণী পয়েন্টের আগের এক কিলোমিটারের ‘সুইমিং জোন’ এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভাঙা জিও টিউব বাঁধ এলোমেলোভাবে পড়ে থাকায় সৈকতের চিরচেনা চেহারা শ্রীহীন করে তুলেছে।
জানতে চাইলে সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, গত শুক্রবার ছিল পূর্ণিমার পূর্ণাঙ্গ জো (ভরা কাটাল)। এ কারণে পানির উচ্চতা এবং তাণ্ডব দুটিই বেশি ছিল। গতকাল তাণ্ডব কিছুটা কমেছে। কমতে শুরু করেছে জোয়ারের পানির উচ্চতাও। এ কারণে গতকাল নতুন করে সৈকতের ভাঙন চোখে পড়েনি। দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শুরু হওয়া জোয়ার ছিল বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় ভাটা। রাত আটটার দিকে আবার জোয়ার শুরু হয়।
দু—এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে উল্লেখ করে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সৈকতের চেহারা আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে কিছুদিন সময় লাগবে।
লাবণী পয়েন্টে বৃহস্পতিবার কিছু জিও টিউব বাঁধ হয়েছিল জানিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সাঈদ বলেন, গতকাল আরও কিছু জিও টিউব বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ মিটারের বাঁধ হচ্ছে। এতে লাবণী পয়েন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। রোববার থেকে উত্তর দিকে সমিতি পাড়ায় আরও ১৫০ মিটার জিও টিউব বাঁধ নির্মাণ করা হবে। যার উচ্চতা দুই থেকে আড়াই মিটার। এ কাজে খরচ হবে ৩০ লাখ টাকা।
গত ৫০—৬০ বছরে বালিয়াড়িতে এমন ভাঙনের নজির নেই জানিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, পাউবোর অপরিকল্পিত জিও টিউব ও জিও ব্যাগভর্তি বালুর বাঁধের কারণে পুরো সৈকতের এমন ভাঙনদশা।
বালুর বাঁধ দিয়ে সৈকতের ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা। তিনি বলেন, সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোতোধারা স্বাভাবিক নিয়মে চলে, বাধার সৃষ্টি হলে চালায় তাণ্ডব।