সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : পুলিশ নিয়ে অনেকের বিরূপ ধারণা রয়েছে। সে ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন আট মাস আগে সাতক্ষীরা যোগদান করা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান। যোগদানের পর থেকেই তিনি একে একে অপরাধ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তার প্রচেষ্টায় জেলার পুলিশের সর্বস্তরে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। জনসাধারণের দোরগোড়ায় আধুনিক পুলিশিং সেবা পৌঁছে দিতে রাত-দিন নিরলস কাজ করে চলেছেন তিনি।
পুলিশের রুটিন ওয়ার্কের বাইরেও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন দেশ এবং জাতির কল্যাণের জন্য। পুলিশ সুপার হিসেবে সাতক্ষীরাবাসীর নজর কেড়েছেন, স্থাপন করেছেন অনন্য উদাহরণ।
চলতি বছরের আগষ্ট মাসের ২৩ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম। মাত্র ৮ মাসে পুলিশ সুপারের আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ সাতক্ষীরার সকল শ্রেনী পেশার মানুষ।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে , পুলিশ সুপারের সাথে যদি কোন ধনী লোক ও গরীব লোক দেখা করতে যান, তাহলে পুলিশ সুপার সবার আগে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেন যে বৃদ্ধ লুঙ্গিপরা লোকটি দাড়িয়ে আছে তাকে আগে দেখা করার সুযোগ করে দেন পুলিশ সুপার। শুধু তাই নয়,পুলিশ সুপার চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঐ অসহায় মানুষটির সমস্যার কথা শোনেন ধৈয্য ধরে।
এছাড়া অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট সার্কেল অথবা ওসিকে বলে তাদের সমস্যা সমাধান করে দেন। মানবিক পুলিশ অফিসার হিসাবে পুলিশ সুপার বেশ প্রশংসা অর্জন করে চলেছেন। এক মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সাজিয়া খাতুনের লেখা পড়ার দায়িত্ব নেন পুলিশ সুপার।
আবুল হোসেন নামক এক বৃদ্ধ বিদেশ যাওয়ার নাম করে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এক প্রতারক কে দিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ সুপারের চেস্টায় প্রতারকের নিকট থেকে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ সুপার আবুল হোসেনকে সেই টাকা ফেরত দেন।
এছাড়া তীব্র শীতে যারা কষ্ট পাচ্ছিলেন তাদের দুঃখ দুর্দশার চিত্র দেখে পুলিশ সুপার রাতের আধারে কম্বল নিয়ে বাস টার্মিনাল, বাইপাস সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূল শীতাত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।
এদিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যোগদানের পর বিগত ৮ মাসে জেলার আটটি থানায় পুলিশ সুপারের তদারকিতে ৬৯২ টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে নাশকতা মামলা ২০ টি, বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা ৩ টি, অস্ত্র মামলা ১২ টি, মাদকদ্রব্য মামলা ৬১৮ টি এবং চোরাচালান মামলা ৩৯টি।
অপরদিকে, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে ও তদারকিতে হওয়া বিভিন্ন অভিযানে মাদকদ্রব্যের মধ্যে ফেন্সিডিল ১’শ ৭৮ বোতল, গাঁজা ৭৬ কেজি ৮’শ১৩ গ্রাম, ইয়াবা ট্যাবলেট ৯ হাজার ৩’শ ২৭ পিচ, ট্যাফেডাল ট্যাবলেট ৯ হাজারব ৩’শ ২০ পিচ, ভারতীয় মদ ৮৪ বোতল ও দেশী মদ ৩২ লিটার উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া চোরাচালানের সময় স্বর্ণের বার ২৪ পিচ, রুপা ৪৭ কেজি ৪৫ গ্রাম, ফেন্সিডিল ৫’শ ৯৯ বোতল, পাতার বিড়ি ৬৮ প্যাকেট, ভারতীয় মদ ৩ বোতল, ভারতীয় শাড়ী ২৫ পিচ, ভারতীয় ক্রিম ১৬ পিচ, মোবাইল ফোন ৪টি জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া ডাকাতি মামলায় ২১ আসামী কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের ফেসবুকসহ সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যেসব পোস্ট করা হয়েছে, তার কমেন্টে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ কমেন্টটে পুলিশ সুপারকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশংসা করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মেহেদীআলী সুজয় বলেন, সাতক্ষীরার বর্তমান পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান যোগদানের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কারণ ১৩-১৪ সালে তিনি সাতক্ষীরার সদর সার্কেল হিসেবে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে তিনি ভূমিকা রেখে চলেছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশবিরোধী চক্রটি বিভিন্ন চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলিশ সুপারের দৃঢ় ভূমিকার কারণে এখানে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। একারণে পুলিশ সুপার মহোদয় সর্ব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
পুলিশ সুপারের যোগদানের পর থেকে জেলার ট্রাফিক বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ট্রাফিক পুলিশ শহরের প্রধান প্রধান সড়কে সিমেন্টের রিং বসিয়ে রাস্তা ক্রসিং চলাচল পথ নির্ধারন করেছে। এতে করে সড়কে আগের তুলনায় দূর্ঘটনা কম ঘটছে। তাছাড়া হেলমেট বিহীন চালক, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ী জব্দ করে কোটি টাকা সরকারী রাজস্ব আদায় করেছে।
পুলিশ সুপারের সব থেকে বড় অর্জন বলা যায়, চলতি বছর মে মাসের ১৫ তারিখে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতায় বিনা টাকায় ৭৬ জনকে কনস্টেবল পদে চাকুর দেওয়া।
সাতক্ষীরায় পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে জেলাবাসিকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কোন অপশক্তি যাতে সাতক্ষীরায় মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া মাদক এবং চোরাচালান বন্ধে জেলা পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। সকলের সহযোগিতা পেলে জেলা পুলিশের কার্যক্রম আরো এগিয়ে যাবে।