নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি (আল আমিন) : নরসিংদীর রায়পুরায় জমি ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ধন্দের জেরে নূরুল হক ও তার সহযোগিরা প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়ি ঘরে দেশী অস্ত্র ও গুলি ককটেল গুলাবারুদ রেখে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেদের জালে নিজেরাই ফেঁসে গেছেন তিন যুবক।
এ ঘটনায় গত রবিবার রাতে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জনকে আসামি করে র্যাব-১১ রায়পুরা থানায় মামলা করেন।
সোমবার বিকেলে অভিযুক্ত মোঃ দুলাল ওরফে নুরুল হক (৪২), একই গ্রামের জুয়েল হোসেন (৩২) ও আমিনুল ইসলাম সুজন (৩২)কে পুলিশী প্রহরায় বিজ্ঞ আদালতের মধ্যেমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
আসামিরা হলেন, তুলাতুলী গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে মোঃ দুলাল ওরফে নুরুল হক (৪২), একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জুয়েল হোসেন (৩২) ও বাচ্চু মিয়ার ছেলে আমিনুল ইসলাম সুজন (৩২), ধন মিয়ার ছেলে মোঃ ফারুক (৪৫),হেলিম মিয়ার ছেলে মো কাজল (৪৫), আবদুল মালেক এর ছেলে আলী আক্কাছ (৪০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওই গ্রামের মোবারক হোসেনের সাথে প্রতিবেশী মোঃ দুলাল ওরফে নূরুল হকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ওইদিন রাতে নুরুল হক ও তার সহযোগীরা প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে ফাঁসাতে ফন্দি আঁটে। ওইদিন রাতে তারা গোপনে প্রতিপক্ষের চার বাড়ির উঠনে গোয়াল ঘরে রান্না ঘরের সামনে বিল্ডিংয়ের সাদে দেশী অস্ত্র ও গুলি ককটেল গুলাবারুদ রেখে প্রতিপক্ষ নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসাতে চক আটে। র্যাব-১১- এর সদস্যরা ওই এলাকায় দেশীয় অস্ত্র ও গুলি ককটেল রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে৷ রাত আনুমানিক ২টায় তুলাতুলি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের সদস্যরা তাদের কে সাথে নিয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করে। পরে র্যাব-১১- এর সদস্যদের সহযোগিতার নাম করে প্রতিপক্ষদের ফাঁসাতে নাটক করে অস্ত্র ১৩৮টি ককটেল, ছয়টি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, ১১টি শটগানের কার্তুজ উদ্ধার করে দেন। ওই চার বাড়ির চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব সদস্যরা। তাদের গতিবিধি সন্দেহ হলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আটক করে। র্যাব-১১ অফিসে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। র্যাব-১১ এর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিন যুবক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেরা ব্যবহারসহ অন্যের কাছে সরবরাহ করার কথা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ফলে নিজেদের পাতা ফাঁদের জালে নিজেরাই ফেঁসে যান। ওই সময় সন্দেহ বাজন হিসেবে মোবারক মুন্সি, আক্তার হোসেন, হাবিবুর রহমান, শাহ আলম চার জনকে র্যাব-১১ কেম্পে জিজ্ঞাসাবাদে সম্পৃক্ততা না পেয়ে ২৪ ঘন্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হাকিম, ফরিদ মুন্সি, রেনো বেগম, আনোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবত অস্ত্রের ব্যবসা করে আসছে ভয়ে এলাকার লোকজন মুখ খুলতে পারেনি। তাদের সাথে আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী জরিত রয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি একজন প্রবাসী। ছুটিতে বাড়িতে আসার পর তারা বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় পরিতপ্ত ঘরে অস্ত্র রেখে ফাঁসানোর নাটক করে।
সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রউফ বলেন, গত আটমাস আগে একই কায়দায় নাটক সাজিয়ে আমার নিরপরাধ দুই ছেলেসহ তিনজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিলো। জেলে জেতে হয়েছে। তাদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় মুক্তি চাই। এ কাজে আরও জারা জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন,শাহ আলম, হাবিবুর রহমান, মোবারক হোসেন বলেন, অভিযুক্তরা মিথ্যা নাটক করে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তাদের সাথে আরও কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি জরিত রয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
উলেখ্য, গত শনিবার রাতে উপজেলার তুলাতুলী চকবাজার এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। গত রোববার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১-এর নরসিংদী ক্যাম্পের কমান্ডার খন্দকার মোঃ শামীম হোসেন।
জানা যায়, ওই তিনজন সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে রায়পুরা থানা এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ও গোলাবারুদের মাধ্যমে ত্রাসের সৃষ্ট করে আসছিলেন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের সদস্যরা তুলাতুলী চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন।
এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৩৮টি ককটেল, ছয়টি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটার গান, শটগানের কার্তুজ ১১টি, চারটি মোবাইল, ছয়টি সিম কার্ড ও ৬ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।